কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুই দিনে দেশে শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা

১৪ মন্দির ভাঙচুর দুজনের মৃত্যু
দুই দিনে দেশে শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা

সারা দেশে দুই দিনে শতাধিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত প্রায় সব জেলা। এর মধ্যে হবিগঞ্জ ও বাগেরহাটে হামলায় নিহত হয়েছেন দুজন। ১৪টি মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। দখল, ভাঙচুর, হামলা, লুটপাটসহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে যশোরের পাঁচ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। তবে হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিয়েছে ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। গত সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মন্দিরে হামলা শুরু হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। কেউ কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধেরও ডাক দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সারা দেশে প্রায় ১১০টি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬টি ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাজালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর হয়। সাতকানিয়ার উপজেলা ঐক্য পরিষদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার লিখন কান্তি দাশের ফার্মেসিতে হামলা-ভাঙচুর, বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের বাসিন্দা সৌরভ নাথের বাড়িতে হামলা, রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট, পতেঙ্গা থানার কাজল কান্তি লোদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর, সদরের চকবাজারে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

দিনাজপুরের পার্বতিপুরে সেনপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট, যশোর সদরে কার্তিক পোদ্দারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। নীলফামারীতে দুটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার ১১ নম্বর সোনারায় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট, ডিমলায় কমল রায়ের দোকানে হামলাসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

সিলেটে দুটি ঘটনার মধ্যে সদরে ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক নেতা রকি দেবের বাসায় হামলা ও লুটপাট, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদিশ চন্দ্র দাসের অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় কর্মরত পুলিশ সন্তোষ কুমারকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশের ওপর উঠে উল্লাস করে���ে দুর্বৃত্তরা।

ঝিনাইদহে দুটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে সদরের চাকলাপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট, সদরের পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা রামচন্দ্র সরকারের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট। বাগেরহাট সদর থানার রাখালগাছী ইউনিয়নের মৃণাল চক্রবর্তীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার স্ত্রী ও মেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

পঞ্চগড় সদরের ১নং জোলই ইউনিয়নের স্বপন দেবনাথের বাড়িতে হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের পূর্ব পাইকপাড়া কৌবৈল্লভ আশ্রমে হামলা ও পুকুরের ঘাট ভেঙে দখলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় পাঁচরির ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট, দেবীগঞ্জের সরদারপাড়ায় মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতিভাঙ্গার গোদামারিতে কেষ্ট কুমার বর্মণ, আদিতমারীর শবদল গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

রাজধানীর লালবাগে ঋষিপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের গোপালদীতে সুজন সাহার বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের তারাকান্দিতে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মেহেরপুরে ইসকন মন্���িরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গুপ্তি ইউনিয়নে হিন্দুপাড়ায় ব্যাপক হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে রোহিতপুরে বণিকপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট, নড়াইল সদরের ১২নং বিশালী ইউনিয়নের রোমদিয়া গ্রামে সুজর বসুর বাড়িতে হামলা, লুটপাট, শ্লীলতাহানি শেষে চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

আগের দিন সোমবার শেরপুরে একটি, খুলনায় ৫টি, ফেনীতে ১টি, দিনাজপুরে ৪টি, নরসিংদী, কিশোরগজ্ঞ, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুরে একটি করে, যশোরে ৭টি, সাতক্ষীরায় ৪টি, দিনাজপুরে ৪টি, শেরপুরে ২টি, নোয়াখালী ও মাগুরায় একটি করে, খুলনায় ২টি, মনমনসিংহে ৩টি, বগুড়ায় ৬টি, ফরিদপুরে ২টি, জয়পুরহাট ও বাগেরহাটে একটি করে, পিরোজপুরে তিনটি, মানিকগঞ্জে একটি, ঢাকায় একটি ও হবিগঞ্জে ২টি হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে।

যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা চলমান থাকার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ক্যান্টনমেন্টে যোগাযোগ করেও আক্রান্তরা কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ঐক্য পরিষদের নেতারা।

এ ছাড়া নড়াইলে একটি, পটুয়াখালীতে একটি, নোয়াখালী ও পঞ্চগড়ে একটি, ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি, ঝিনাইদহে ৩টি, পাবনা, নীলফামারী, টাঙ্গাইল, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, লালমনিরহাট, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহে একটি করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোনায় দুটি মন্দির ভাঙচুর, সদরের পৌর শহরসহ বাংলাবাজারে হিন্দুদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন