জীবনের আলেখ্য

 

একাধারে নট, নাট্যকার, নির্দেশক, সংগঠক, অধ্যাপক। নাটকের প্রতি তথা থিয়েটারের প্রতি একান্ত ভালোবাসা না থাকলে এমনটা হওয়া সম্ভব হয় না। নিজের জীবন দিয়ে সেটাই করে দেখিয়েছিলেন হরিমাধব মুখোপাধ্যায়। ১৯৪১ সালের ৩ রা এপ্রিল বালুরঘাটে হরিমাধব মুখ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নীলকান্ত মুখ্যেপাধ্যায়। নাটকের প্রতি ছিল তাঁর অসম্ভব একটা টান। চাইতেন নিজের মত করে নাটকের ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছতে। কলকাতায় কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে নাটক, থিয়েটার দেখতেন। এই দেখার চোখই তাঁকে নাটকের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।

তাঁর রচিত প্রথম নাটক গুলি হল ক্রিস্টির কাহিনী অবলম্বনে 'দশ পুতুল' এবং চেকভের কাহিনী অবলম্বনে 'বহ্বারম্ভ'১৯৬৯ সালে বালুরঘাটে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'ত্রিতীর্থ' নাট্যদল। তিন বছরের জন্য তিনি হাওড়ার 'নটনাট্যম' গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পেশাদার ও অপেশাদার মঞ্চে এবং কলকাতায় ঘুরে ঘুরে নাটক দেখা তাঁকে সর্বদা সাহায্য করেছে তাঁর নিজের থিয়েটারের কাজ করার ক্ষেত্রে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ নাটকের সঙ্গে যুক্ত থেকে বালুরঘাটের মাটিতে ত্রিতীর্থ নাট্য সংস্থা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে নাট্য আন্দোলনের দিশারী হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন নাট্যদলে তাঁর নির্দেশিত ও অভিনীত নাটক গুলি হল 'পাপ ও পাপী', 'আক্��েল সেলামি', 'বন্দিবীর', 'ছেঁড়া কাগজের ঝুড়ি', 'পাখির বাসা', 'নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র', 'রজনীগন্ধা', 'চার প্রহর', 'ছায়ানায়িকা', 'পুতুল খেলা', 'বৃষ্টি বৃষ্টি', 'বিশে জুন', 'ছুটির খেলা', 'তিন বিজ্ঞানী', 'জল', 'বিছন', 'চিরকুমার সভা', 'দেবীগর্জন', 'মন্ত্রশক্তি' প্রভৃতি। তাঁর নিজের রচিত নাটক গুলি হল 'শিশুপাল', 'অনিকেত', 'বিছন', 'খারিজ', 'মাতৃতান্ত্রিক', 'নিকট গঙ্গা', 'দেবাংশী', 'ক্ষীরের পুতুল' প্রভৃতি। জেলা, জেলার বাইরে, কলকাতা ও বহু নাট্য প্রতিষ্ঠান তাঁকে বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছে।

      হরিমাধব বাবু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। কলকাতা থেকে বালুরঘাটে ফিরে বাঁশ কেনার টাকাও ছিলনা। গ্রামের মানুষের সাহায্যে বাঁশ এনে সামিয়ানা খাটিয়ে অনুষ্ঠানের দিন মঞ্চ তৈরী হত। পাড়া- পড়শির বাড়ি থেকে চেয়ার-বেঞ্চ আনা হত। একজন আইনজীবী পড়শি ঘর ছেড়ে দিতেন মেকআপের জন্য। স্কুলে ছুটির দিন দেখে অনুষ্ঠান হত। সেখান থেকেও বেঞ্চ নিয়ে আসা হত আবার যথাস্থানে রেখে আসার আশ্বাস দিয়ে। এইভাবেই একেবারে শুরুর দিকে মুক্তাঙ্গনে নাটক অভিনীত হত হরিমাধব ও তাঁর দলের মাধ্যমে। 

থিয়েটারের কাজের জন্য বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের তরফে তাঁর 'দেবাংশী' নাটককে শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়। 'দেবগর্জন' নাটকের জন্য তিনি দিশারি পুরস্কার পান। নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলায় তাঁকে সম্মানিত করা হয়। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডিলিট উপাধি দেওয়া হয়। তিনি পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমির পুরস্কার এবং বঙ্গভূষণ সম্মান। তাঁর মতে নাটকই একমাত্র মাধ্যম যেখানে দর্শকের সাথে অভিনেতার আবেগ সঞ্চারিত হয়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...