বিষয়বস্তুতে চলুন

অ্যান্টেনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Salekin.sami36 (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:০৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (তথ্যসূত্র যোগ/উন্নতিকরণ)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

অ্যান্টেনা
একটি সেলুলার টাওারের শীর্ষে অনেকগুলি প্যাচ (আয়তাকার) অ্যান্টেনা।
��ার্যনীতিতড়িৎচুম্বকত্ব
আবিস্কারকহাইনরিখ হের্ত্‌স
প্রথম প্রস্তুতকরণের তারিখ১৮৮৬
ইলেকট্রনিক প্রতীক
অ্যান্টেনার কার্যপদ্ধতির উপর একটি ভিডিও

অ্যান্টেনা (ইংরেজি: antenna) বা এরিয়াল (ইংরেজি: aerial) বা আকাশ-তার বেতার, টেলিভিশন এবং রাডার ব্যবস্থায় ব্যবহৃত একটি যন্ত্রাংশ যা তড়িৎচৌম্বক বেতার তরঙ্গ প্রেরণ ও গ্রহণ করে এবং নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করে।[] এটি বিভিন্ন ধাতব উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন আকার ও প্রকারের হতে পারে যা অ্যান্টেনার প্রয়োগের উপর নির্ভর করে। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টেনাগুলি দেখতে মাস্তুলের মতো হয়। অন্যদিকে, মহাকাশে দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তু থেকে বিকিরিত বেতার তরঙ্গ গ্রহণ করার জন্য বিশাল আকারের পরাবৃত্তিক প্রতিফলক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়।

তরঙ্গ সম্প্রচারের সময় রেডিও ট্রান্সমিটার, অ্যান্টেনার টার্মিনালে বৈদ্যুতিক প্রবাহ সরবরাহ করে এবং অ্যান্টেনা সেই প্রবাহের শক্তিকে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ (রেডিও তরঙ্গ) হিসেবে বিকিরণ করে। তরঙ্গ গ্রহণের সময়,অ্যান্টেনা তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের (রেডিও তরঙ্গ) কিছু শক্তি ধারণ করে,অ্যান্টেনার টার্মিনালে বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি হয়, যা রিসিভারে প্রেরণ করা হয়। অ্যান্টেনা সব ধরনের রেডিও যন্ত্রপাতির জন্য অপরিহার্য উপাদান।[]

হাফ-ওয়েভ ডাইপোল অ্যান্টেনা যখন একটি রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করে: আগমনী ওয়েভ-এর বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র (E) রডগুলির ইলেকট্রনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা তাদের সামনে এবং পিছনে ঠেলে দেয়। এর ফলে, অ্যান্টেনায় কম্পমান বর্তমান (কালো তীর দ্বারা চিহ্নিত) প্রবাহিত হয়।
অ্যান্টেনা যখন রেডিও তরঙ্গ বিকিরণ করে: ট্রান্সমিটার রডগুলিতে একটি এসি কারেন্ট (লাল তীর দ্বারা চিহ্নিত) প্রয়োগ করে, যা তাদের পর্যায়ক্রমে পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জ দেয়, ফলে তরিৎ ক্ষেত্রের লুপগুলি নির্গত হয়। বর্তমানের মেরু পরিবর্তন হলে লুপগুলির তীরগুলি প্রতি বার বিপরীত হয়ে যায়।

ইতিহাস

অ্যান্টেনার তাত্ত্বিক ভিত্তি ��্যাক্সওয়েল-এর সমীকরণের উপর নিহিত, যা স্কটিশ গণিতজ্ঞ ও পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৬৪ সালে রয়্যাল সোসাইটি সম্মুখে উপস্থাপন করেছিলেন। এই সমীকরণগুলো বিদ্যুৎ ও চুম্বকীয় ক্ষেত্রকে একত্রিত করে একটি একক তত্ত্ব গঠন করে যা তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব নামে পরিচিত। ম্যাক্সওয়েল অ্যাম্পিয়ার, গাউস, এবং ফারাডের সূত্র ব্যবহার করে এবং স্থানান্তরিত তড়িৎ প্রবাহকে (ইংরেজি: Displacement Current) অন্তর্ভুক্ত করে একটি একক তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের সমীকরণের সেট তৈরি করেছিলেন। তিনি পূর্বাভাস করেছিলেন যে আলোকে তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং আলো ও তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ উভয়ই একই গতিতে ভ্রমণ করে।[]

অ্যান্টেনার উপর প্রথম স্বীকৃত এবং সন্তোষজনক পরীক্ষা জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হেইনরিখ রুডলফ হার্টজ (১৮৫৭–১৮৯৪) পরিচালনা করেছিলেন। ১৮৮৭ সালে, তিনি একটি সিস্টেম তৈরি করেন, যা রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন ও সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। তাঁর পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল তড়িৎচৌম্বক বিকিরণের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যা ম্যাক্সওয়েলর তত্ত্বের অন্যতম দাবি ছিল। প্রেরক যন্ত্রে একটি পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎস ব্যবহার করে একটি ডাইপোল (এক জোড়া এক মিটার লম্বা তার) সংযুক্ত করা হয়, যার শেষে দুটি পরিবাহী বল ছিল। যখন ভোল্টেজ বাড়ানো হতো, একটি স্পার্ক সৃষ্টি হতো বলগুলির মধ্যে ফাঁকা স্থানে। রিসিভার ছিল একটি সাধারণ লুপ, যার মধ্যে দুটি একই রকম পরিবাহী বল ছিল। বলগুলির মধ্যে ফাঁকা স্থান সাবধানে টিউন করা হয় যাতে স্পার্কটি কার্যকরভাবে গ্রহণ হয়। যখন প্রেরক যন্ত্রে স্পার্ক সৃষ্টি হতো, তখন রিসিভারের ফাঁকায়ও একই সময়ে স্পার্ক দেখা যেত। এটি প্রমাণ করে যে প্রেরক থেকে রিসিভারে তথ্য তারহীন অবস্থায় তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ দ্বারা প্রেরিত হচ্ছিল।[]

হেইনরিখ হার্টজ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাগুলি পরিচালনাকালীন সময় রেডিও তরঙ্গের বাস্তব ব্যবহার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। ইতালীয় আবিষ্কারক গুগলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪–১৯৩৭) প্রথম বেতার প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেন। তিনি রেডিওটেলিগ্রাফ সিস্টেম তৈরি করেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বহু সহযোগী কোম্পানির প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত পরীক্ষা ছিল ১৯০১ সালে পোলডু, যুক্তরাজ্য থেকে সেন্ট জনস, নিউফাউন্ডল্যান্ড, কানাডায় ট্রান্সআটলান্টিক সম্প্রচার, যাতে আনটিউনড সিস্টেম ব্যবহার করে করা হয়। বেতার টেলিগ্রাফির উন্নয়নে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯০৯ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কার্ল ফের্দিনান্দ ব্রাউন-এর সাথে ভাগাভাগি করেছিলেন। তিনি টেলিগ্রাফ বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা নির্মাণ করেন। তিনি নিম্ন কম্পাঙ্ক এর তরঙ্গ সম্প্রচারের জন্য উচু অ্যান্টেনার গুরুত্ব আবিষ্কার করেন। মার্কোনি ও অন্যান্যরা যে অ্যান্টেনাগুলি প্রথম দিকে নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলির কার্যকর কম্পাঙ্ক অ্যান্টেনার আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করত। পরবর্তীতে একটি অসিলেটরের মাধ্যমে অ্যান্টেনার কম্পাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা যেত। অসিলেটরটি বেতার সংকেতটি উৎপাদন করত।[]

২০শ শতকের শুরুতে অ্যান্টেনা প্রযুক্তির বিকাশ সংকেত জেনারেটরের উপলব্ধতার জন্য সীমিত ছিল, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন মেগাহার্জ পরিসরে বা তার নিচে কাজ করত। রেজোন্যান্ট দৈর্ঘ্যের অ্যান্টেনা (যেমন, অর্ধ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ডাইপোল) শারীরিকভাবে বড় এবং কম দিকনির্দেশক ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর সময় নিরাপদ যোগাযোগের প্রয়োজনীয় হয়ে উঠায় নির্দেশক অ্যান্টেনার দিকে জোরালোভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়, যা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি (HF) পরিসরে (৩ থেকে ৩০ MHz, যা প্রায়ই শর্টওয়েভ বলা হয়) এবং তার ওপরে সহজে বাস্তবায়িত হয়।

লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (ALMA) এর অ্যান্টেনাস[]

বেল টেলিফোন কোম্পানি উদ্ভাবিত মোবাইল টেলিফোন, ১৯২৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির পুলিশ গাড়িতে চালু করা হয়। ১৯২৬ সালে, জাপানে ইয়াগি অ্যান্টেনা উদ্ভাবিত হয় । ১৯৩৪ সালে, বাণিজ্যিক টেলিফোন মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক শুরু হয় যাতে পরাবৃত্তাকার প্রতিফলক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়।[] ১৯২০-এর দশকে অনেকগুলি উপাদানকে একটি নিয়মতান্ত্রিক সারিতে (Array) সমন্বিত করে আরও শক্তিশালী অ্যান্টেনা নির্মাণ করা হয়। এর পরের দশকে তরঙ্গনির্দেশকের উন্নয়ন শুরু হলে ধাতব শিঙার অ্যান্টেনা তৈরি করা হয়; এগুলি খুবই উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার সংকেতের সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।

এর পরের বছরগুলিতে আরও বিভিন্ন ধরনের কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টেনা উদ্ভাবন করা হয়। অ্যান্টেনাকে কেবলমাত্র তরঙ্গ সম্প্রচার কিংবা গ্রহণের জন্য বানানো হতে পারে। সম্প্রচারক অ্যান্টেনাকে সাধারণত গ্রাহক অ্যান্টেনার তুলনায় অনেক বেশি বৈদ্যুতিক শক্তি ধারণ করতে হয়। একটি সম্প্রচারক অ্যান্টেনাকে কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের তরঙ্গের জন্য নকশা করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ এম (অ্যামপ্লিচিউড মডুলেশন) বেতার সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ৫৩৫ থেকে ১৬০৫ কিলোহাটর্জ পর্যন্ত কম্পাঙ্কগুলি ব্যবহার করা হয়। এই কম্পাঙ্কগুলিতে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কয়েকশত মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে, ফলে অ্যান্টেনার আকার তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যদিকে এফ এম (ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন) সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ৮৮ থেকে ১০৮ মেগাহার্টজ পর্যন্ত কম্পাঙ্কগুলি ব্যবহার করা হয়, যেখানে তরঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিটার। এক্ষেত্রে অ্যান্টেনাকে সম্প্রচার ও গ্রহণ কাজের জন্য অনেক সঠিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয়।

কার্যপদ্ধতি ও সারসংক্ষেপ

হাফ-ওয়েভ ডাইপোলের স্ট্যান্ডিং ওয়েভ, যা এর রেজোন্যান্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে চালিত হচ্ছে। তরঙ্গগুলি গ্রাফিক্যালভাবে রঙিন বার দ্বারা প্রদর্শিত হয় (ভোল্টেজের জন্য লাল এবং কারেন্টের জন্য নীল), যার প্রস্থ সংশ্লিষ্ট পয়েন্টে পরিমাণের অ্যামপ্লিটিউডের সাথে আপেক্ষিক।

প্রেরক অ্যান্টেনা রেডিও তরঙ্গ সৃষ্টি করে। নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির একটি ভোল্টেজ অ্যান্টেনায় প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টেনার উপাদানগুলির মধ্যে ভোল্টেজ এবং কারেন্ট বৈদ্যুতিক এবং চুম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টি করে। রিসিভারে, অ্যান্টেনার উপর দিয়ে পাস করা তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ একটি ছোট ভোল্টেজ সৃষ্টি করে। এভাবে অ্যান্টেনা, রিসিভারে ইনপুটের জন্য সংকেত উৎস হিসেবে কাজ করে। একই অ্যান্টেনা ট্রান্সমিট এবং রিসিভ উভয় কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা অ্যান্টেনা রিসিপ্রোসিটি নামে পরিচিত। অনেক বেতার ব্যবহারে, অ্যান্টেনাকে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার মধ্যে স্যুইচ করা হয়। একটি উল্লম্ব অ্যান্টেনা একটি অনুভূমিকভাবে মেরু সংকেত গ্রহণ করে যার বিপরীতটিও সত্য। বাস্তব জীবনের অ্যান্টেনাগুলি সাধারণত সম্পূর্ণ অনুভূমিক বা উল্লম্ব হয় না, তাই কিছু সংকেত গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও, অধিকাংশ সংকেত ট্রান্সমিশন পথের উপর প্রতিফলন এবং অন্যান্য মাল্টিপাথ অবস্থার কারণে পোলারাইজেশনে পরিবর্তন ঘটে। তবুও, এই অ্যান্টেনা অভিমুখের অমিলের কারনে কিছু পরিমান সংকেত ক্ষয় হয়।[]

অ্যান্টেনাগুলি একটি মাত্র তার বা দণ্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে, যেগুলি বিভিন্ন আকৃতিতে বিন্যস্ত থাকতে পারে (দ্বিমেরুবিশিষ্ট, ফাঁস আকৃতির, কম্বুরেখা বা সর্পিলাকৃতির)। আবার অনেকগুলি উপাদানকে সারিবদ্ধভাবে (একটি রেখায় বা একটি সমতলে অবস্থিত বা ইলেকট্রনিকভাবে ঘূর্ণনক্ষম) বিন্যস্ত করে অ্যান্টেনা বানানো হতে পারে। আবার প্রতিফলক এবং প্রতিসরক (লেন্স) অ্যান্টেনাতে পরাবৃত্তাকার থালা ব্যবহার করে বেতার তরঙ্গের শক্তি সংগ্রহ ও কেন্দ্রীভূত করা হয় (প্রতিফলক দূরবীনে একই ভাবে পরাবৃত্তাকার দর্পণ বা আয়না ব্যবহার করে আলোকরশ্মি সংগ্রহ করা হয়)। দিকনির্দেশী অ্যান্টেনাগুলিকে এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে তারা সংকেতের উৎসের দিকে সরাসরি তাক করা যায় এবং এগুলির মাধ্যমে দিক খুঁজে বের করা যায়।

অ্যান্টেনার আকৃতি ও আকার বিস্ময়করভাবে বৈচিত্র্যময় হতে পারে। একটি অ্যান্টেনা যেই রূপই ধারণ করুক, সরল হোক বা জটিল, এর বৈদ্যুতিক কার্যকারিতা নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়:

১. ফিড-পয়েন্ট ইম্পিডেন্স: যেকোনো অ্যান্টেনার সাথে দুটি প্রকারের ইম্পিডেন্স সম্পর্কিত থাকে: সেলফ ইম্পিডেন্স এবং মিউচুয়াল ইম্পিডেন্স।

  • সেলফ ইম্পিডেন্স: এটি হলো সেই ইম্পিডেন্স যা আপনি একটি অ্যান্টেনার ফিড-পয়েন্ট টার্মিনালে মাপেন, যেটি সম্পূর্ণভাবে অন্য কোনো কন্ডাক্টরের প্রভাব থেকে দূরে থাকে।
  • মিউচুয়াল (অথবা কাপলড) ইম্পিডেন্স: এটি কাছাকাছি কন্ডাক্টরের পারাসিটিক প্রভাবের কারণে ঘটে; অর্থাৎ, অ্যান্টেনার রিঅ্যাকটিভ নিকটবর্তী ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত কন্ডাক্টরের প্রভাব।

২. অ্যান্টেনার দিকনির্দেশনা (Directivity), লাভ (Gain), এবং কর্মক্ষমতা (Efficiency)।

৩. পোলারাইজেশন: অ্যান্টেনার পোলারাইজেশন, যা সংকেতের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের দিকে নির্দেশ করে এবং সংকেতের প্রেরণ ও গ্রহণের দিক নির্ধারণ করে।[]

অ্যান্টেনা প্যারামিটার

অ্যান্টেনা প্যাটার্ন হল একটি 2D (বা 3D) চিত্র যা অ্যান্টেনার সংকেতের শক্তি ও দিক দেখায়। এটি সাধারণত পোলার কোঅর্ডিনেটে এবং dB স্কেলে উপস্থাপন করা হয়।

একটি ইয়াগি–উডা অ্যান্টেনার অনুভূমিক ক্রস সেকশন পোলার প্লট।

অ্যান্টেনা রিসিপ্রোসিটি বলতে বুঝায় যে একটি অ্যান্টেনা সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রেই একভাবে কাজ করে।

অ্যাজিমথ প্লেনঃ একটি রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে বাম থেকে ডানে কোণ, যা ০ থেকে ৩৬০ ডিগ্রি বা -১৮০ থেকে +১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। আজিমুথ কোণ সাধারণত গ্রীক অক্ষর ফি (φ) দ্বারা প্রকাশ করা হয় (অ্যান্টেনা ডিজাইন)। প্রায়ই "AZ" সংক্ষেপে লেখা হয়।

এলিভিশন প্লেনঃ অ্যান্টেনার অনুভূমিক (xy প্লেন) থেকে উল্লম্ব (z-অক্ষ) পর্যন্ত কোণ, যা -৯০ ডিগ্রি (নীচে) থেকে +৯০ ডিগ্রি (উপর) পর্যন্ত হতে পারে। এটি সাধারণত "EL" হিসেবে সংক্ষেপিত।

আইসোট্রোপিক রেডিয়েটরঃ একটি তাত্ত্বিক রেডিয়েটর যা সমস্ত দিক (AZ এবং EL উভয় দিকেই) সমানভাবে তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ পাঠায় (অথবা গ্রহণ করে), কোন সংকেতের ক্ষতি ছাড়াই। বাস্তবে কোনো আইসোট্রোপিক রেডিয়েটর নেই। একটি আইসোট্রোপিক রেডিয়েটরের ডিরেকটিভিটি যা সমস্ত দিকেই সমান তীব্রতা বিকিরণ করে, তা ০ dB। দিকনির্দেশক অ্যান্টেনাগুলি আইসোট্রোপিক রেডিয়েটরের বিপরীতে পরিমাপ করা হয়, কারণ তারা একটি নির্দিষ্ট দিককে প্রাধান্য দেয়, তাই তাদের ডিরেকটিভিটি dB-এ প্রকাশিত হলে ইতিবাচক হয়। ডিরেকটিভিটি "কার্যকরী এলাকা (এপারচার)" এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি ফাংশন হিসেবে হিসাব করা যায়।

ওমনি-ডিরেক্টশনাল অ্যান্টেনাঃ একটি অ্যান্টেনা যা সমস্ত আজিমুথাল দিকেই সমানভাবে বিকিরণ করে।[]

মূল বিম হলো সেই অঞ্চল যা সর্বাধিক বিকিরণের দিকের চারপাশে থাকে (সাধারণত সেই অঞ্চল যা মূল বিমের চূড়ান্ত পিক থেকে ৩ dB এর মধ্যে থাকে)।

দূর ক্ষেত্র হলো অ্যান্টেনা থেকে দূরে অবস্থিত অঞ্চল, এই অঞ্চলে, বিকিরণ প্যাটার্ন দূরত্ব (R) অনুযায়ী আকার পরিবর্তন করে না। যদিও E- এবং H- ক্ষেত্রগুলি এখনও 1/R অনুযায়ী হ্রাস পায়, শক্তির ঘনত্ব 1/R² অনুযায়ী হ্রাস পায়। দূর ক্ষেত্র বিকিরিত ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়, যেখানে E- এবং H- ক্ষেত্রগুলি একে অপরের এবং প্রচারের দিকের সাথে লম্বভাবে অবস্থিত থাকে, যেমন প্লেন তরঙ্গের ক্ষেত্রে হয়।

অ্যান্টেনার তাৎক্ষণিক পার্শ্ববর্তী এলাকায়, আমরা রিঅ্যাকটিভ নিকট ক্ষেত্র পাই। এই অঞ্চলে, ক্ষেত্রগুলি প্রধানত রিঅ্যাকটিভ ক্ষেত্র, যার মানে E- এবং H- ক্ষেত্রগুলি একে অপরের থেকে ৯০ ডিগ্রি ফেজের বাইরে থাকে (প্রচারিত বা বিকিরিত ক্ষেত্রগুলির ক্ষেত্রে, ক্ষেত্রগুলি লম্বভাবে (লম্বাভাবে) থাকে কিন্তু ফেজে থাকে)।

ফ্রাউনহোফার ডিফ্র্যাকশন (অভ্যন্তরীণ, প্রতিক্রিয়াশীল নিকট ক্ষেত্র) এবং ফ্রেসনেল ডিফ্র্যাকশন (বহিরাগত, বিকিরণ নিকট ক্ষেত্র) অঞ্চলের ক্রম, ফার ফিল্ডের তুলনায়।

বিকিরণ নিকট ক্ষেত্র বা ফ্রেনেল অঞ্চল হলো নিকট এবং দূর ক্ষেত্রের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এই অঞ্চলে রিঅ্যাকটিভ ক্ষেত্রগুলি প্রভাবশালী নয়; বিকিরণ ক্ষেত্রগুলি উদ্ভূত হতে শুরু করে। তবে, দূর ক্ষেত্রের অঞ্চলের মতো নয়, এখানে বিকিরণ প্যাটার্নের আকার দূরত্বের সাথে যথেষ্ট পরিবর্তিত হতে পারে।[]

ডিরেকটিভিটি একটি মৌলিক অ্যান্টেনা প্যারামিটার। এটি অ্যান্টেনার বিকিরণ প্যাটার্ন কতটা 'দিকনির্দেশক' তা পরিমাপ করে। একটি অ্যান্টেনা যা সমস্ত দিকেই সমানভাবে বিকিরণ করে তার কার্যকরভাবে শূন্য দিকনির্দেশনা থাকবে, এবং এই ধরনের অ্যান্টেনার ডিরেকটিভিটি হবে ১ (অথবা ০ dB)।

অ্যান্টেনার দক্ষতা হলো অ্যান্টেনার কাছে সরবরাহ করা শক্তির সাথে অ্যান্টেনা থেকে বিকিরিত শক্তির অনুপাত। একটি উচ্চ দক্ষতার অ্যান্টেনা তার ইনপুটে উপস্থিত প্রায় সমস্ত শক্তি বিকিরণ করে দেয়। একটি নিম্ন দক্ষতার অ্যান্টেনা তার বেশিরভাগ শক্তি অ্যান্টেনার মধ্যে ক্ষতি হিসেবে শোষিত হয় বা ইম্পিডেন্স মিসম্যাচের কারণে প্রতিফলিত হয়।

অ্যান্টেনার দক্ষতা হ্রাস সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে হয়:[১০]

  • ধাতুতে পরিবহনের সময় শক্তির ক্ষতি
  • ডাইইলেকট্রিক ক্ষতি
  • ইম্পিডেন্স মিসম্যাচ কারনে ক্ষতি
ডায়াগ্রাম যা আইসোট্রোপিক গেইন কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তা প্রদর্শন করে। অক্ষগুলি প্রতি ওয়াটে প্রতি বর্গ মিটার পাওয়ার ঘনত্ব প্রতিনিধিত্ব করে।R হলো একটি নির্দেশক অ্যান্টেনার বিকিরণ প্যাটার্ন, যা অ্যান্টেনার কিছু নির্দিষ্ট দূরত্বে সর্বাধিক পাওয়ার ঘনত্ব S ওয়াট প্রতি বর্গ মিটার বিকিরণ করে। Riso হল একটি আইসোট্রোপিক অ্যান্টেনার বিকিরণ প্যাটার্ন যা সমান মোট শক্তি বিকিরণ করে এবং Siso হল যে পাওয়ার ঘনত্ব এটি বিকিরণ করে। প্রথম অ্যান্টেনার গেইন হলো S/Siso। যেহেতু নির্দেশক অ্যান্টেনা z অক্ষ বরাবর একটি ছোট কোণ ভিতরে একই মোট শক্তি বিকিরণ করে, এটি ইসোট্রপিক অ্যান্টেনার চেয়ে সেই দিকের দিকে উচ্চ সংকেত শক্তি থাকতে পারে এবং তাই গেইনও বেশি হতে পারে।

অ্যান্টেনা গেইন শব্দটি বর্ণনা করে আইসোট্রোপিক উৎসের তুলনায় সর্বাধিক বিকিরণের দিকে শক্তি কতটা প্রেরিত হয়। অ্যান্টেনার স্পেসিফিকেশন শীটে অ্যান্টেনা গেইন সাধারণত ডিরেকটিভিটির চেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয় কারণ এতে আসল সিগন্যাল লসের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

একটি ৩ dB গেইনের প্রেরণ অ্যান্টেনা মানে দূরে থাকা অ্যান্টেনার থেকে প্রাপ্ত শক্তি, একই ইনপুট পাওয়ার সহ একটি ক্ষতিহীন আইসোট্রোপিক অ্যান্টেনার থেকে প্রাপ্ত শক্তির তুলনায় ৩ dB (দুইগুণ) বেশি হবে। একটি ক্ষতিহীন অ্যান্টেনা হলো ০ dB (অথবা ১০০%) দক্ষতার একটি অ্যান্টেনা। একইভাবে, একটি নির্দিষ্ট দিকের ৩ dB গেইন সহ একটি গ্রহণ অ্যান্টেনা একটি ক্ষতিহীন আইসোট্রোপিক অ্যান্টেনার তুলনায় ৩ dB বেশি শক্তি গ্রহণ করবে।

কখনও কখনও অ্যান্টেনা গেইন কোণের ফাংশন হিসেবে আলোচনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে, বিকিরণ প্যাটার্ন প্লট, যেখানে প্যাটার্নের একক (বা মাত্রা) অ্যান্টেনা গেইনে পরিমাপ করা হয়।

অ্যান্টেনা ইম্পিডেন্স হল অ্যান্টেনার টার্মিনালে ভোল্টেজ এবং কারেন্টের অনুপাত। অ্যান্টেনা তত্ত্বের মূল ধারণাগুলি দাবি করে যে অ্যান্টেনাটি ট্রান্সমিশন লাইনের সাথে "ইম্পিডেন্স ম্যাচড" হতে হবে, না হলে অ্যান্টেনাটি বিকিরণ করবে না। VSWR (ভিএসডব্লিউআর) দ্বারা বোঝা যায় অ্যান্টেনার ইম্পিডেন্স কতটা ভালোভাবে মেলানো হয়েছে।[১১]

প্রকারভেদ

একটি ডাইপোল অ্যান্টেনা একটি মৌলিক অ্যান্টেনা যা দুটি ধাতব রড নিয়ে গঠিত। অ্যান্টেনাটি রডগুলির মধ্যবর্তী কেন্দ্রবিন্দুতে ফিড করা হয় এবং পার্শ্ববর্তী দিকে একটি সবদিক থেকে বিকিরণ প্যাটার্ন প্রদর্শন করে। (রডগুলির অক্ষের দিকে বিকিরণ ঘটে না।) যদি ডাইপোলটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় অর্ধেক তরঙ্গদৈর্ঘ্য হয় তবে অ্যান্টেনাটি রেসোনেন্সে থাকে এবং ভাল বিকিরণ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। তদুপরি, একটি অর্ধ-তরঙ্গ ডাইপোলের ইনপুট ইম্পিডেন্স, ৫০ Ω এবং ৭৫ Ω ট্রান্সমিশন লাইন ইম্পিডেন্সের কাছে থাকে।

যদি আমরা ডাইপোলের কাছাকাছি একটি সমান্তরাল রড যোগ করি এবং রড এবং ডাইপোলের শীর্ষ অংশগুলি সংযুক্ত করি, তবে আমরা একটি মোড়ানো ডাইপোল অ্যান্টেনা পাবো। মোড়ানো ডাইপোলের ইনপুট ইম্পিডেন্স বৃদ্ধি পায়। উচ্চ ইম্পিডেন্সের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহারের সময় এটি সুবিধাজনক।

ডাইপোল উপাদানগুলি একত্রিত করে এমন অ্যান্টেনা কাঠামো তৈরি করা যায় যা একক ডাইপোল অ্যান্টেনার চেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ বা উচ্চ গেইন সরবরাহ করে। লগারিদমিক পিরিয়ডিক ডাইপোল অ্যান্টেনাতে (এলপিডিএ) বাড়তে থাকা দৈর্ঘ্যের ডাইপোলগুলি একটি দুই-কন্ডাক্টর লাইনে মাউন্ট করা হয়। পৃথক ডাইপোল উপাদানের অবস্থান এবং দৈর্ঘ্য একটি লগারিদমিক নিয়ম অনুসরণ করে, তাই এর নাম লগারিদমিক পিরিয়ডিক ডাইপোল অ্যান্টেনা। অ্যান্টেনাটি ট্রান্সমিশন লাইনের সৰ্বাধিক পূর্বের পয়েন্টে ফিড করা হয়।[১২]

মনোপোল হলো একটি ডাইপোল যা তার কেন্দ্র ফিড পয়েন্টে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং একটি গ্রাউন্ড প্লেনের বিপরীতে ফিড করা হয়েছে। মনোপোলের উপরকার কারেন্ট এবং চার্জ ডাইপোলের উপরের অর্ধাংশের মতোই হয়, কিন্তু টার্মিনাল ভোল্টেজ ডাইপোলের অর্ধেক। ভোল্টেজ অর্ধেক কারণ ইনপুট টার্মিনালের গ���যাপ প্রস্থ ডাইপোলের অর্ধেক, এবং অর্ধেক দূরত্বে একই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র অর্ধেক ভোল্টেজ দেয়। সুতরাং, একটি মনোপোলের ইনপুট ইম্পিডেন্স তার ডাইপোলের অর্ধেক।[]

মাইক্রোস্ট্রিপ অ্যান্টেনাগুলি ১৯৭০-এর দশকে প্রধানত মহাকাশে ব্যবহারের জন্য খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আজকাল, এগুলি সরকারী এবং বাণিজ্যিক অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য ব্যবহার করা হয়। এই অ্যান্টেনাগুলি একটি গ্রাউন্ডেড সাবস্ট্রেটের উপর একটি ধাতব প্যাচ নিয়ে গঠিত। ধাতব প্যাচ বিভিন্ন কনফিগারেশন নিতে পারে। তবে, আয়তাকার এবং বৃত্তাকার প্যাচগুলিসবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ এর বিশ্লেষণ ও তৈরি করা সহজ এবং এর আকর্ষণীয় বিকিরণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে কম ক্রস-পোলারাইজেশন বিকিরণ। মাইক্রোস্ট্রিপ অ্যান্টেনাগুলি কম প্রোফাইলযুক্ত, সমতল এবং অমতল পৃষ্ঠের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আধুনিক প্রিন্টেড-সার্কিট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা সহজ এবং সস্তা, কঠোর পৃষ্ঠে মাউন্ট করা হলে যান্ত্রিকভাবে দৃঢ়, এমএমআইসি ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রবণতা, পোলারাইজেশন, প্যাটার্ন এবং ইম্পিডেন্সের দিক থেকে অত্যন্ত বহুমুখী। এই অ্যান্টেনাগুলি উচ্চ-পারফরম্যান্স বিমান, মহাকাশযান, স্যাটেলাইট, মিসাইল, গাড়ি এবং এমনকি মোবাইল ডিভাইসের উপর মাউন্ট করা যেতে পারে।[১৩]

লুপ অ্যান্টেনাগুলি বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায় যেমন আয়তক্ষেত্র, বর্গ, ত্রিভুজ, উপবৃত্ত, বৃত্ত, এবং অনেক অন্যান্য কনফিগারেশন। বিশ্লেষণ এবং নির্মাণের সহজতার কারণে, বৃত্তাকার লুপ সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পেয়েছে। লুপ অ্যান্টেনাগুলি সাধারণত দুটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়: বৈদ্যুতিকভাবে ছোট এবং বৈদ্যুতিকভাবে বড়। বৈদ্যুতিকভাবে ছোট পরিধির বা সীমানার লুপ অ্যান্টেনাগুলির রেডিয়েশন প্রতিরোধক খুবই কম হয়, যা সাধারণত তাদের ক্ষতির প্রতিরোধকের চেয়ে কম। তাই এগুলি খুব খারাপ রেডিয়েটর এবং রেডিও যোগাযোগে সাধারণত ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহার করা হয় না। যখন এগুলি কোনও এমন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহার করা হয়, তখন এটি সাধারণত রিসিভিং মোডে হয়, যেমন পোর্টেবল রেডিও এবং পেজারগুলিতে, যেখানে অ্যান্টেনার দক্ষতা সিগন্যাল-টু-নয়েজ রেশিওর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়।[১৩]

একক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি করা প্রায়ই আরও নির্দেশমূলক বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। অ্যান্টেনার মাত্রা বাড়ানোর আরেকটি উপায় হল, একক উপাদানের আকার না বাড়িয়ে, রেডিয়েটিং উপাদানগুলির একটি সমাবেশ গঠন করা যা বৈদ্যুতিক এবং জ্যামিতিক কনফিগারেশন অনুসরণ করে। এই নতুন অ্যান্টেনাকে, যা বহু উপাদান দ্বারা গঠিত, একটি অ্যারে বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, একটি অ্যারের উপাদানগুলি সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। এটি অপরিহার্য নয়, তবে এটি প্রায়ই সুবিধাজনক, সহজ এবং ব্যবহারিক। একটি অ্যারের পৃথক উপাদানগুলি যেকোনো আকারে হতে পারে (তার, খোল, ইত্যাদি)।

অ্যান্টেনা অ্যারে হল একটি অ্যান্টেনার গ্রুপ যা একক অ্যান্টেনার মতো একসাথে সাজানো হয় যাতে তারা একটি যৌথ রেডিয়েশন প্যাটার্ন তৈরি করতে পারে, যা পৃথক অ্যান্টেনাগুলি দ্বারা তৈরি হয় না। অর্থাৎ, একগুচ্ছ অ্যান্টেনা একসাথে কাজ করবে রেডিও সিগন্যাল প্রেরণ বা গ্রহণ করতে। এই ধরনের অ্যান্টেনার ডিজাইন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যকরী এবং অর্থনৈতিক কারণ প্রতিটি অ্যান্টেনা ছোট হয়।[১৪]

অ্যাপারচার অ্যান্টেনা সাধারণত মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের অ্যান্টেনার বিভিন্ন জ্যামিতিক কনফিগারেশন রয়েছে। এগুলি তরঙ্গনালী বা হর্ণের আকারে হতে পারে, যার অ্যাপারচার বর্গাকার, আয়তাকার, বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার, বা অন্য কোনও কনফিগারেশন হতে পারে। অ্যাপারচার অ্যান্টেনাগুলি স্পেস অ্যাপ্লিকেশনের জন্য খুবই কার্যকরী, কারণ এগুলি স্পেসক্রাফ্ট বা এয়ারক্রাফ্টের পৃষ্ঠে ফ্লাশ মাউন্ট করা যেতে পারে। তাদের ওপেনিংকে পরিবেশগত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে একটি ডাইইলেকট্রিক উপকরণ দিয়ে আচ্ছাদিত করা যেতে পারে। এই ধরনের মাউন্টিং বিমানচালনাগত প্রোফাইলকে ব্যাহত করে না, যা উচ্চ গতি প্রয়োগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[১৩]

রিফ্লেক্টর অ্যান্টেনা হল একটি অ্যান্টেনা যা পৃথক একটি উৎস থেকে আগত তড়িৎচুম্বকীয় সিগন্যালগুলি প্রতিফলিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই অ্যান্টেনাটি প্রধানত উচ্চ মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি তার হালকা ওজন এবং সহজ কাঠামোর জন্য স্পেসক্রাফ্ট অ্যান্টেনা সিস্টেমে খুব জনপ্রিয়। এই অ্যান্টেনা বিভিন্ন ধরনের রিফ্লেক্টর দিয়ে তৈরি, যেগুলির পৃষ্ঠ বক্ররেখা, প্যারাবোলিক, স্ফেরয়ড, বা এলিপসয়েড হতে পারে। এর মধ্যে প্যারাবোলিক রিফ্লেক্টর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।[১৫]

রেফারেন্স

  1. Modern Dictionary of Electronics। Elsevier। ১৯৯৯। আইএসবিএন 978-0-08-051198-6 
  2. Balanis, C.A. (Jan./1992)। "Antenna theory: a review"Proceedings of the IEEE80 (1): 7–23। ডিওআই:10.1109/5.119564  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. Stutzman, Warren L.; Thiele, Gary A. (২০১৩)। Antenna theory and design (3rd ed সংস্করণ)। Hoboken, NJ: Wiley। আইএসবিএন 978-0-470-57664-9 
  4. Huang, Yi; Boyle, Kevin (২০০৮)। Antennas: from theory to practice। Chichester: Wiley, A John Wiley and Sons, Ltd. Publication। আইএসবিএন 978-0-470-51028-5 
  5. "Media Advisory: Apply now to attend the ALMA Observatory inauguration"ESO press release। ৬ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১২ 
  6. Frenzel, Louis E. (২০২১-০৭-২৯)। "Welcome To Antennas 101"Electronic Design (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯ 
  7. Straw, R. Dean, সম্পাদক (২০০৫)। The ARRL antenna book ; [the ultimate reference for amateur radio antennas, transmission lines and propagation] (20. ed সংস্করণ)। Newington, Conn: ARRL। আইএসবিএন 978-0-87259-904-8 
  8. "Antenna Design" 
  9. "Antenna-Theory.com - Field Regions"www.antenna-theory.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯ 
  10. "Antenna Efficiency"www.antenna-theory.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯ 
  11. "Antenna Basics"www.antenna-theory.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯ 
  12. "RF and Microwave Architectures"Microwave and RF Engineering: 659–755। ২০১০-০৬-০৪। ডিওআই:10.1002/9780470660201.ch15 
  13. Balanis, Constantine A. (২০০৫)। Antenna theory: analysis and design (3. ed সংস্করণ)। Hoboken, N.J: Wiley-Interscience। আইএসবিএন 978-0-471-66782-7 
  14. Agarwal, Tarun (২০২২-১২-০৭)। "Antenna Array : Design, Working, Types & Its Applications"ElProCus - Electronic Projects for Engineering Students (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯ 
  15. Agarwal, Tarun (২০২৩-০১-১৩)। "Reflector Antenna : Working, Types, Advantages & Its Applications"ElProCus - Electronic Projects for Engineering Students (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯